একটি পূর্ণাঙ্গ সমাজ গড়তে গেলে সাহিত্য সংস্কৃতি ও সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে, যে জনগোষ্ঠীর ইন্টালেকচুয়াল হিস্ট্রি’ লেখার মানুষ থাকবে না – সে জাতির সামাজিক মৃত্যু কিন্তু অনিবার্য।
পশ্চিমবঙ্গে প্রতি চারজন নাগরিকের মধ্যে একজন মুসলমান, সংখ্যা ভারি সংখ্যালঘু। অথচ স্বাধীনতার পর এই সামাজিক জনগোষ্ঠী অদ্ভুত ভাবে অদৃশ্য থেকেছে। স্বাধীনতার আনন্দের সঙ্গে দেশভাগের যন্ত্রণা দুই ধর্মের মানুষের উপর বীভৎস ভাবে পড়েছে, ভিটে-মাটি ছেড়ে, এক কাপড়ে মানুষের জনস্রোত এ দেশে পড়ে, এই দেশান্তরী হওয়ার গল্প প্রবন্ধে, সাহিত্যে, কবিতায় নানা ভাবে সে সব অভিজ্ঞতার কথা ধরে রাখা হয়েছে। আবার দেশ ভাগের ফলে এ রাজ্যের মুসলমানরা সংখ্যায় ও মনের দিক থেকে আক্ষরিক অর্থেই সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে, শহরের উপকণ্ঠে মুসলমান অধ্যুষিত ভরা জনপদ অচিরেই মুসলমান শূন্য হয়ে পড়েছিল, কবরস্থানে গড়ে উটেছে বসতি, এই সব হারানোর আখ্যান লেখা হয়নি। স্বাধীনতার কয়েক দশক পরেও সংখ্যালঘু মুসলমানদের অবস্থা ত থৈ ব চ। এই সময়ে রাজ্যের মুসলমানদের হালহকিকত নিয়ে চর্চা করার উপাদানও ভীষণ ভাবে অভাব। তবে গত দু-তিন দশকে মুসলমানর সামাজ ক্রমশ ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে কিছু শিক্ষা অনুরাগী মানুষ শিক্ষা কে অবলম্বন করে শিরদাঁড়া খাড়া করে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। এই কাজে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন আল আমীন মিশনকে কেন্দ্র করে নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে।
এর ফলেই শিক্ষাই মুসলমানদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে, একেবারে প্রান্তিক জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কেউ হচ্ছেন ডাক্তার কেউ বা প্রশাসক। বাঙ্গালী মুসলমানদের কাছে এ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ। এই মুহূর্ত বা যাঁদেরকে কেন্দ্র করে এই নিঃশব্দ বিপ্লব। এই বিপ্লবের কারিগরদের নিয়ে মিজানুর রহমানের অসামান্য কাজ ‘সাফল্যের উড়ান’। এই কঠিন কাজকে অত্যন্ত যত্ন সহকারে মিজানুর রহমান আমদের কাছে তুলে ধরেছেন। এই বই শুধুমাত্র বর্তমানের চাহিদা মেটাবে তা নয়, বরং ভবিষ্যতের ইতিহাসবেত্তাদের কাছে অমূল্য সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হবে।
Reviews
There are no reviews yet.